এইচ এম জাকিরঃ ভোলার মনপুরার কাজির চরে কৃষকদের সাথে স্বপন ডাকাত গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে ৭ পুলিশ সহ অত্যন্ত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশদেরকেই মনপুরায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য দুই পুলিশ সহ তিনজনকে ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
বুধবার (১২ জুলাই) দুপুরে উপজেলার বিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকা কাজীরচরের প্রায় অর্ধশত কৃষকের বন্দোবস্ত জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে সেখানকার বাসিন্দা জলদস্যু হিসেবে পরিচিত স্বপন ডাকাত গ্রুপের সাথে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মনপুরা থানা পুলিশ জানান, দীর্ঘদিন যাবত ওই চরের স্থানীয় চাষীরা তাদের বন্দোবস্ত জমিতে চাষাবাদ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত স্বপন ডাকাত গ্রুপের হাতে হামলার শিকার হন। এমনকি সেই জমিতে চাষাবাদ করতে হলে স্বপন ডাকাতকে মাসয়ারা দেওয়াসহ জমি চাষের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্বপন ডাকাতের কাছ থেকেই অতিরিক্ত মূল্যে নিতে হবে। এ ধরনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে থেকে দীর্ঘদিন যাবত চাষিরা অতিষ্ঠ হয়ে সেখানকার চাষীদের পক্ষে মাইনুদ্দিন নামের এক কৃষক ভোলা পুলিশ সুপার ও মনপুরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে ওই চরে মনপুরার থানার ওসি তদন্ত শঙ্কর তালুকদারের নেতৃত্বে ৭ পুলিশ সদস্য সহ ভুক্তভোগী চাষীদের সাথে নিয়ে যায় কাজীর চরে। এরপর পুলিশের উপস্থিতি পেয়ে বন্দোবস্ত জমির মালিক চাষিরা উদ্ভূত হয় তাদের জমিতে চাষাবাদ শুরু করে দেন।
খবর পেয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্বপন ডাকাত সহ তার গ্রুপের সকল সদস্যরা। এরপর চাষীদেরকে জমি চাষে বাধা দিতেই শুরু হয় বাকবিতান্ডা। মুহূর্তের মধ্যেই রূপ নেয় ভয়াবহ সংঘর্ষের। স্বপন ডাকাত গ্রুপের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে অধিকাংশ কৃষকের শরীর রক্তাক্ত হয়ে তাদের অনেকেই গুরুতর আহত হন।
একপর্যায়ে গঠনস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা স্বপন ডাকাত গ্রুপের লোকদেরকে বাধা দিলে ডাকাত সদস্যরা পুলিশের উপরও হামলা চালায়। এতে করে ওসি তদন্ত শংকর, এস আই সাগর দে ও পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীর সহ কমবেশি ৭ জন পুলিশই আহত হন।
একপর্যায়ে অবস্থার ব্যাগতিক দেখে পুলিশ ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও স্বপন ডাকাত গ্রুপের হামলায় ৭ পুলিশ ও কৃষক সহ অত্যন্ত ২০ জন আহত হন।
এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় আহত পুলিশ সদস্য সহ সকলকে উদ্ধার করে মনপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। গুরুত্বর আহত পুলিশের এসআই সাগর, পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীর ও কৃষক মোঃ বাহারকে উন্নত চিকিৎসার ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে পুনরায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় কৃষক বাহারকে ঢাকা রেফার করা হয়। এছাড়া আহত বাকিদেরকে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
তাদের মধ্যে আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, মনপুরা থানার ওসি তদন্ত শংকর তালুকদার, এস আই লুৎফুর, এস.আই সাগর, কনস্টেবল জাহাঙ্গীর, কনস্টেবল শাহীন, কনস্টেবল নাইম ও কনস্টেবল সাইদুল।
অপরদিকে আহত কৃষকদের মধ্যে রয়েছেন, মোঃ বাহার, মোঃ ফরিদ, জাবেদ ফরাজী, নুর ইসলাম ফরাজী, ছোট মনির ফরাজী, খোকন মেলেটারী, রাসেল ফরাজী, নুরনবী ফরাজী, মতিন ফরাজী, কাসেম, নাসির, মাইনুদ্দিন ও আলাউদ্দিন। এদের সবার বাড়ি উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।
আহত কৃষক জাবেদ ফরাজী, ফরিদ ও বাহারসহ অন্যান্যরা জানান, দীর্ঘদিন যাবত বিচ্ছিন্ন কাজীর চরে চাষাবাদ করতে গেলে জমির একর প্রতি ৬ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে আসছেন স্বপন ডাকাত। তার দাবিকৃত টাকা না দিলে চরে চাষাবাদ করতে দিবেনা বলে হুমকী ধামকি সহ বিভিন্ন সময় চাষীরা স্বপন ডাকাতের লোকদের কাছে হামলার শিকার হন।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে কাজীরচরের কৃষকদের পক্ষে মাইনুদ্দিন কৃষক লিখিতভাবে ভোলা জেলা পুলিশ সুপারকে অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে বুধবার সকালে মনপুরা থানার পুলিশসহ কৃষকরা কাজীরচরে চাষাবাদ করতে গেলে স্বপন ডাকাতের নের্তৃত্বে চরকলাতলী ও হাতিয়ার লাঠিয়াল বাহিনী কৃষক ও পুলিশের উপর হামলায় চালায়। এতে ২০ জন আহত হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, যদিও এ ঘটনায় কোন গ্রুপের পক্ষ থেকেই এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ আসেনি। তবে পুলিশ এসয়েট হওয়ার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত