ভোলা প্রতিনিধিঃ এ যেন পুকুর চুরিকেও হার মানিয়েছে। ভোলার রূপালী ব্যাংকের ড্রাইভার নাজিমুদ্দিনের কান্ড। সরকারি চাকরির বয়স না থাকলেও নিজের প্রকৃত বয়সকে গোপন রেখে জালজালিয়াতির মাধ্যমে নতুন করে পুনরায় জম্মনিবন্ধন করে পূর্বের ভোটার তালিকার জন্ম তারিখ থেকে ১৮ বছর কমিয়ে নতুন ভোটার তালিকায় নাম অন্তরভূক্ত করে প্রবেশ করেছেন সরকারি চাকরিতে। এমনকি রীতিমতো পাঁচ বছর যাবত করে যাচ্ছেন চাকুরিও। সম্প্রতি তার কর্মস্থলসহ বিভিন্ন দিকে বিষয়টি যানাযানি হতেই শুরু হয় তোলপার। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে নেয়নি কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
বলছি ভোলা সদরের রূপালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের ড্রাইভার নাজিমুদ্দিনের কথা। সরকারি চাকরির বয়স না থাকলেও নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে পূর্বের ভোটার তালিকায় থাকা নিজের নাম গোপন রেখে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় নাম অন্তভুক্ত করেছেন ১৮ বছর কমিয়ে। এরপর প্রবেশ করেছেন সরকারি চাকরিতে।
তবে বিষয়টি জানাজানি হলে বয়স কমানো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে প্রতারক নাজিমুদ্দিন নিজেই। কেননা নিজের বয়স কমিয়ে তার ছোট তিন বোনের মধ্যে দুই বোনই এখন তার বড় হয়ে গেছে। এমনকি ছোট বোনের বয়সের সাথে তৈরি হয়েছে তার পাঁচ মাসের ব্যবধান। যা নিয়ে ঘরে বাইরে সর্ব মহলেই তৈরি হয়েছে হাস্যকর এক বিষয়।
তথ্যানুুসন্ধানে জানা যায়, ভোলার পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত মোঃ ছাদেক মিয়ার দুই পরিবারের মধ্যে প্রথম পরিবারের মেজ ছেলে নাজিমুদ্দিন। মাতা আফরোজা বেগম, তার বড় ভাই বোনের মধ্যে রয়েছেন জসিম উদ্দিন ও নুর জাহান বেগম। এছাড়া ছোট তিন বোনের মধ্যে রয়েছেন রুনু বেগম, সুলতানা রাজিয়া ও মারজিয়া বেগম।
বড় ভাই জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের গাড়ি চালক হওয়ার সুবাদে পরিবারের তিন ভাইবোন ছাড়াও তাদের বিভিন্ন আত্মিয়স্বজন সহ বিভিন্ন মানুষকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে ভাই নাজিমুদ্দিন রূপালী ব্যাংকের ভোলার প্রধান কার্যালয়ের গাড়ি চালক, ছোট বোন সুলতানা রাজিয়া রয়েছেন ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ভোলা নতুন বাজার প্রধান কার্যালয়ের হিসাব শাখায় ও অপর ছোট বোন মারজিয়া বেগম রয়েছেন এক্সিম ব্যাংক ভোলা সদর কার্যালয়ে।
যদিও বড় ভাই জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এর গাড়ি চালক হওয়ার সুবাদে এক এক করে তাদের পরিবারের তিন ভাই বোনকে ব্যাংকের চাকুরি দেয়ার সুযোগ হলেও ছোট ভাই নাজিমুদ্দিনের চাকুরিটি রূপালী ব্যাংকের মতো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে হওয়া নিয়েই বাধে নানা বিপত্তি।
কেননা পারিবারিক সূত্রে ও সাবেক ভোটার তালিকায় উল্লেখিত নাজিমুদ্দিনের জন্ম তারিখ ০১/০২/১৯৭৬ সাল হিসেবে ২০১৮ সালে তিনি চাকরিতে যোগদানের সময়ে তার বয়স থাকার কথা ৪৩ বছর। তাহলে সরকারি চাকরিতে যোগদানে নাজিমুদ্দিনের বয়স না থাকলেও কি ভাবে তিনি রূপালী ব্যাংকের মতো একঢি সরকারি ব্যাংকে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। এমন প্রশ্নে স্থানীদের পাশাপাশি আমাদের গনমাধ্যম কর্মীদেরকেও বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে।
এ নিয়ে নাজিমুদ্দিনের সহপাঠী ও কয়েকজন বাল্যবন্ধুদের সাথে কথা হলে তারা জানান, নাজিমুদ্দিনতো বৃহত্তর উকিল পাড়ার বাসিন্দা হিসেবে তাকে এমনকি তার পরিবারের সকলকেই অত্র এলাকার প্রতিটি মানুষই চিনেন। তার এক বাল্যবন্ধু রুবেল জানান, নাজিমুদ্দিনের সঠিক জন্ম তারিখ তিনি বলতে না পারলেও শৈশব থেকে তারা ওর সাথে চলাফেরা করার সুবাদে তার জন্ম সাল ১৯৭৬/৭৭ এ রকমই হবে বলে তিনি জানান। একই কথা বলেন নাকিমুদ্দিনের অন্যসব বন্ধু সোহেল, জসিম, টুয়েল সহ আরো অনেকে। তারাও নাজিমুদ্দিনের জন্ম সাল ১৯৭৭/৭৮ এ রকমই হবে বলে এমনটিই ধারনা দিয়েছেন।
এবার নাজিমুদ্দিনের প্রকৃত বয়স যাচাই করতে জেলা নির্বাচন অফিসে যেতেই সেখান থেকেও বেড়িয়ে আসছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত