নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গেলো পাঁচ দিনে ভোলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২টি রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ উদ্ধার হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ সাপই স্থানীয়রা মেরে ফেললেও মাত্র একটি সাপ বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একের পর এক বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল, মানুষের বাসাবাড়ি ও খেলার মাঠ থেকে উদ্ধারে জেলার সর্বত্রের জনমনে ছড়িয়ে পড়েছে চরম আতঙ্ক।
জানা গেছে, ২০ জুন বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার শিবপুরের ‘গরিবের ডুবাই নামে খ্যাত’ চায়না ইপিজেড বালুর মাঠে স্থানীয়রা খেলতে গিয়ে দেখতে পায় বিষাক্ত সাপ রাসেল বাইপার। মুহূর্তের মধ্যে তারা সাপ টিকে পিটিয়ে মেরে ফেললেও পুরো এলাকায় মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে চরম আতঙ্ক। এর আগে তজুমউদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের একটি বসত বাড়ির সামনে ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের জসিম হাওলাদারের বাড়িতে একটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়।
এছাড়া গত বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে জেলার তজুমউদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় খেলার মাঠে দেখা মিলে এই সাপের। এর আগে মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশায় ইউনিয়নে পাকার মাথা এলাকায় বসত বাড়ির পাশের জালের সঙ্গে পেঁচানো অবস্থায় একটি রাসেল ভাইপার পাওয়া যায়। মঙ্গলবার রাতে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জালু মাঝির বসতঘর থেকেও একটি রাসেলস ভাইপার উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত রোববার (১৬ জুন) লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ এলাকায় একটি বাড়ির শৌচাগারে এ সাপ দেখা যায়।
এছাড়াও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ও সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও ৫টি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে সাপগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। তবে তজুমউদ্দিন উপজেলায় পাওয়া একটি সাপ এখনো বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে জেলাজুড়ে রাসেল ভাইপার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সকলের মাঝে।
স্থানীয় জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে জেলার সর্বত্র সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর আগে সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের কুকরি-মুকড়ি, ঢালচর কিংবা মনপুরা উপজেলায় দেখা মিললেও এবার সদর উপজেলাসহ প্রায় সর্বস্থানেই সাপের বিচরণ দেখা দিয়েছে। একের পর এক বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের দেখা মিলায় নদী নালাখাল বিল সহ বিভিন্ন স্থানে কর্মরত সাধারন মানুষ রয়েছেন চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়।
স্থানীয় জেলে সিরাজল মাঝি বলেন, ‘নদীতে মাছ শিকার করে ঘাটের দিকে যাওয়ার সময় বালুর মধ্যে এই সাপটি দেখতে পাই। পরে আরও লোকজন এসে সাপটিকে রাসেলস ভাইপার বলে নাম দেয়। এই সাপ এর আগে আর কখনো দেখিনি। সাপটি দেখতেও অনেক ভয়ানক। অন্য সাপের থেকে দেখতে অনেকটাই আলাদা মনে হলো। সাপটি দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে মেরে ফেললো।’
তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের মেঘনার পাড়ের মোদী ব্যাবসায়ী জয়নাল মিয়া জানান, ‘তার বসতঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে ঘরের লোকজন খোঁজা-খুঁজির এক পর্যায়ে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারকে ঘর থেকে বের হতে দেখেন। তখন সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। একপর্যায়ে সাপটিকে খুঁজে পিটিয়ে মেরে ফেলে উপস্থিত লোকজন।’
সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিশু বলেন, ‘এর আগে আমার ইউনিয়নে এই বিষধর সাপের দেখা পাইনি। পর পর দুই দিন এই সাপের সন্ধান মেলায় আমার ইউনিয়নবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি ও বনবিভাগের লোকজন আসার আগেই সাপটি স্থানীয়রা মেরে ফেলে।’
শুধুই ইউনিয়ন কিংবা গ্রামেই নয়, শহরের মানুষের মাছো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রাসেল ভাইপার সাপের খবরে। এরই মধ্যে শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ব্লিচিং পাউডার ছিটাচ্ছেন বাড়ির মালিকরা। ভোলা পৌর ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুজাহিদুর রহমান বলেন, বাড়ির নিচ তলায় বসবাস করি বিধায় ইদানিং মনের মধ্যে সারাক্ষণ শুধু সাপের আতঙ্ক কাজ করছে। তাই বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে চতুর্দিকে বিলিসিং পাউডার ছিটিয়ে রেখেছি। একইভাবে শহরের বিভিন্ন বাড়ির আঙিনাসহ আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি বিলিসিং পাউডার ছিটিয়ে রাখছেন বাসা বাড়ির মালিকরা।
যদিও এই ব্যাপারে স্থানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতার পাশাপাশি এর প্রতিকারে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা না গেলেও এ ব্যাপারে
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘রাসেল ভাইপার সাপ লোকালয়ে সাধারণত খুব কমই দেখা যায়। বাচ্চা দেয়ার কারণে হয়তো ওই সাপটি লোকালয়ে চলে এসেছে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম শফিকুজ্জামান, ‘চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপ সবচেয়ে বিষাক্ত ও এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহির্গামী বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হোন। বিষক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত