এইচ এম জাকিরঃ অবশেষে ভোলার নবনির্মিত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে শুরু হয়েছে বিচারিক কার্যক্রম। রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় ভবনের তৃতীয় তলার কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এর কার্যক্রম। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এ, এইচ, এম, মাহমুদুর রহমান।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে কাজের পরিসমাপ্তি ঘটলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষায় ছিলো দীর্ঘ আট মাস। অবশেষে বিষয়টি ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিজেপি’র চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এর নখদর্পণে এলে মুহূর্তের মধ্যে বিষয়টি তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে অবহিত করেন। এরই ফলশ্রুতিতে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নবনির্মিত চীফ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালত ভবনে এক মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো এর বিচারিক কার্যক্রম।
মতবিনিময় সভায় জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মোঃ সানাউল হক এর সভাপত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা জজ (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন টাইব্যুনাল) মোঃ আনোয়ারুল হক, অতিরিক্ত জেলা জজ মোঃ আলী মুনসুর, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অসীম কুমার দে, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ফারুক হোসাইন ও মোঃ সাইফুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ বশির উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহবুবুল হক লিটু, জিপি মোঃ নুরুন নবী, সিনিয়র আইনজীবী বারের সাবেক সভাপতি মোঃ ফরিদুর রহমান ও মোঃ সালাউদ্দিন হাওলাদার, মুন্সি জহিরুল ইসলাম খসবু, আমিনুল ইসলাম বাছেদসহ আদালতের সকল আইনজীবী সহ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৃন্দ।
এদিকে ঘন্টা ব্যাপী চলা মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি সহ উপস্থিত বিভিন্ন ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনজীবীদের বক্তব্যে উঠে আসে নবনির্মিত ভবনে শুরু হওয়া বিচারিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন সফলতা। তারা বলেন, দীর্ঘদিন যাবত একই ভবনের মধ্যে একটি এজলাসেই পালাক্রমে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। তাতে করে একদিকে যে মন সময় লাগতো অন্যদিকে ক্রমশ মামলার জট পড়ে থাকতো। তাছাড়া দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে দূরদূরান্ত থেকে আসা সেটা দেখে আশা সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও ছিল কয়েক গুণ। বর্তমানে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পৃথক হওয়াতে একই সময়ে পরিচালনা করা যাবে দুটি আদালতের কার্যক্রম। তাতে করে সময়ও বাঁচবে কমে যাবে মামলার জটও। তাছাড়া একই রুমে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি গাধাগাদি করে চেয়ার টেবিল বিছিয়ে পরিচালনা করছেন তাদের কার্যক্রম। তাতে করে বরাবরই তাদের কর্মকাণ্ডে অনেকটাই বেক পেতে হচ্ছে। তাই নতুন ভবনের মাধ্যমে সকল ধরনের সমস্যাই নিরসনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম।
তবে কিছু কিছু আইনজীবীদের বক্তব্যে উঠে এসেছে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়াও। যেখানে আট তলা বিশিষ্ট বিশাল এই ভবনটিতে ছয়টি লিফট হলেও কম হয়ে যেত, সেখানে মাত্র তিনটি লিফট দেওয়ায় ছয় সাত তালায় উঠতে গিয়ে অনেকেরই পড়তে হবে দীর্ঘ লাইনে। এতে করে কোন কোন ক্ষেত্রে এজলাসে মামলা উঠে গেলে সেই মামলার আইনজীবী যথাসময়ে উপস্থিত না থাকতে পারলেও পরবর্তীতে যেন একই মামলায় পুনরায় চালু করার সুযোগ রাখা হয় সেই দৃষ্টিকোণ থেকেও আইনজীবীরা তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভা শেষে দোয়া মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সকলের মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জানুয়ারির দিকে ভোলার গণপূর্ত বিভাগ সদর রোডের একেএমইজেবি নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এর আট তালা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ পাঁচ সাড়ে চার বছর পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ভবন নির্মাণসহ ভেতরে আধুনিক ডেকোরেশনের মধ্যমে সম্পূর্ণ কাজ সমাপ্তির মাধ্যমিক তা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত