স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার সকাল থেকেই হয়ে ওঠে চারিদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন। দেখা দেয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও হালকা বাতাস এর সাথে বজ্্রপাত। হঠাৎ করে বেড়ে যায় বৃষ্টি ও বাতাসের পরিমান। এরপর ১১টার দিকে বাতাসের পরিমান বেড়ে গিয়ে রূপ নেয় ভয়াবহ টর্নেডোর। মূহুর্তের মধ্যে জেলার মনপুরা, লালমোহন সহ কয়েকটি উপজেলায় ঝড়ের আঘাতে শতাধিক ঘরবাড়ি দোকানপার্ট বিধ্বস্ত হয়। উপড়ে পড়েছে দুই শাতাধিক গাছপালা ও বিদ্যুতের খুটি। বিভিন্ন সড়কে গাছ পড়ে কয়েক ঘন্টা যাবত বিচ্ছিন্ন হয়েছে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এ সময় ঘরের নিচে চাপা পড়ে লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের চর করচ্ছপিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ হারিছ (৭০) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লালমোহন থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব উল আলম বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় হারিছ মিয়া ভিক্ষাবৃত্তির কাজে বের হয়ে করচ্ছপিয়া গ্রামে যান। আনুমানিক ১১টা ১০ মিঃ দিকে ঘুর্ণিঝড় শুরু হলে হারিছ সহ বেশ কিছু মানুষ সেখানকার বাসিন্দা মনিনের ঘরে আশ্রয় নেয়। এ সময় ঝড়ে আঘাতে মনিরের ঘরটি দুমড়ে মুড়ড়ে গেলে তার ঘরে থাকা হারিছ, মনিরের স্ত্রী মিনার, ছেলে রিপন, রিফাত এবং পাশ^বর্তি ঘরের ফরহাদ গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে লালমোহন স্বস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে হারিছকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। মৃত হারিছ ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের করচ্ছপিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আছমত আলী ছেলে।
একই সময় লালমোহন উপজেলার চরভুতা ইউনিয়নের বাসিন্দা কয়ছর আহমেদের ছেলে মোঃ বাচ্চু (৩৫) বজ্রপাতে মারা যায়। ঝড়ের সময় গরু আনতে মাঠে যান তিনি। এ সময় বজ্রাপাতের আঘাতে বাচ্চু মাঠেই লুটে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে লালমোহন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তাছাড়া বজ্্রপাতে আহত হয় আরো পাঁচ জন। তাদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কা জনক দেখে তাদের ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া ঘুর্ণিঝড়ের আঘাতে ওই উপজেলায় বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। উপড়ে পড়ে শতাধিক গাছপালা বিদ্যুতের খুটি।
অন্যদিকে ঘুর্ণিঝড়ের আঘাতে অর্ধশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয় জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায়। সেখানে ঝড়ে আঘাতে হাজিহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশত ঘরবড়ি বিধ্বস্ত হয়। শতাধিক গাছপালা উপড়ে গিয়ে হতাহত হয়েছেন ১০-১২ জন মানুষ। তাছাড়া বিভিন্ন সড়কে গাছ পড়ে কয়েক ঘন্টা বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল।
মনপুরা উপজেলা চেয়ারম্যান মোসাম্মত সেলিনা চৌধুরী বলেন, হাঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে আমাদের উপজেলার শতাধিক বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৭০টিরও বেশি ঘর পুরোপুরি ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরো বেশি। যদিও আমরা ক্ষতিগ্রাস্থদের তালিকা নিরূপন করার কাজ করছি। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সাহায্য সহযোগীতা করে যাচ্ছি।
তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুটি ভেঙ্গে ও উপড়ে গিয়ে বন্ধ রয়েছে মনপুরা, লালমোহনসহ কয়েকটি উপজেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। যদিও পল্লি বিদ্যুৎ ওজোপাকিগোর মাঠ কর্মীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল করার জন্য মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে সাহায্য সহযোগীতা করার জন্য জেলা প্রশানের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে বিজিএফ এর চাল সহ বিভিন্ন ধরনের শুকনো খাবার দিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যপারে ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিমান প্রাথমিক ভাবে বলা না গেলে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে। যদিও ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি পরিবারের মাঝে চাল সহ বিভিন্ন শুকনো খাবার ও ঔষধপত্র দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ঝড়ের আঘাতে ঘরের নিচে চাপা করে মারা যাওয়া ব্যক্তি ও বজ্রপাতে মারা যাওয়া দুই ব্যক্তির পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।