সাইফুল ইসলাম সাকিব, তজুমদ্দিনঃ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিয়ে তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ভূমিহীন-গৃহহীন সোহাগীর জীবন বদলে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একসময়ের ভূমিহীন ও গৃহহীন এই সোহাগী এখন আর অন্যের ঘরে বা জমিতে থাকতে হয় না। মাথা গোঁজার নিশ্চিত আপন স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে সেই মনের আনন্দে কথা বলেন সোহাগী।
সরকারের দেওয়া এই সুবিধা পেয়ে তার চোখে-মুখে এখন স্বস্তির হাসি।সামাজিক মর্যাদা পেয়ে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন সোহাগী।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানতে চাইলে সোহাগি বলেন, ‘আগে ঢাকা ছিলাম,পরের বাসায় বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতাম,এখন আর অন্যের বাসাত কাজ করতে হয় না,অন্যের কাছে হাত পাতা লাগে না। প্রধানমন্ত্রী আমাগোরে ঘর দিয়েছে জমি দিয়েছে,সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এখন আমরা নিজেরা কর্মকরে খাইতে পারি।দর্জি কাজ করে দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাই,স্বামী যা আয় করে তা জমা রাখি।’
সোহাগীর মতো এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই হয়েছে ফাহিমা, জরিনা ও অনেক অসহায় পরিবারের। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকাঘর যেন তাদের স্বপ্নের ঠিকানা। পরম নির্ভরতার স্থান। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা ঘর তাদের জীবনমান বদলে দিয়েছে।
ফাহিমা বলেন, জমি, ঘর কিছুই ছিল না।স্বপ্নেও ভাবিনি কখনও জমিসহ নিজের ঘর হবে। জমিসহ পাকা ঘর দেওয়ায় শেখ হাসিনার সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
জরিনা বলেন, স্বামী অনেক দিন আগে মারা গেছে, দুই মেয়ে ও আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করতাম, অন্যের বাড়িতে থাকতাম।কখনো কল্পনা করতে পারিনি আমি জমিসহ একখানা নতুন পাকা ঘর পাব। ঘর পেয়ে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি।কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
ঐ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই হয়েছে ভূমিহীন ও গৃহহীন ১০০ পরিবারের।আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা নিজেদের ঘরের পাশে সবজি ও ফলের গাছ, হাঁস-মুরগি পালনসহ খেতখামারে কাজ করে নিশ্চিন্তে উপার্জন করে দিন যাপন করছেন। এছাড়া গরু-ছাগল পালন ও ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা রাসেল (৪০) জানান, এখন অনেক ভালো আছি, ঘর পেতে এক টাকাও খরচ হয়নি। আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা রফিজল বলেন, ‘আমাদের দুর্দিন দূর হয়েছে। এখন আমরা সুখে আছি।’
সম্প্রতি ভোলা, তজুমদ্দিন সোনাপুর ইউনিয়নের, আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে এই চিত্র দেখা গেছে। একসময়ের তজুমদ্দিন উপজেলার পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলধারায় আনার লক্ষ্য নিয়ে গৃহীত এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভোলা ৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের দৃষ্টি থেকে বাদ পড়েনি, তজুমদ্দিনের ভিক্ষুক, খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানের চালকসহ সাধারণ শ্রমজীবী, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারী, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, কর্মহীন ও অসুস্থ এবং নদীভাঙনে সব হারানো এই মানুষগুলোও।সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া, কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার-কুমার সবাই রয়েছেন প্রকল্পের সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর তালিকায়।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিত, যার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে দুই শতক জমিসহ ঘর দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে দুটি শয়নকক্ষ, একটি করে বারান্দা, রান্নাঘর ও বাথরুমসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত তজুমদ্দিন মোট ১ হাজার ৩০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা (এক পরিবারের সদস্য আনুমানিক পাঁচ জন হিসাবে)। গড়ে প্রতি পরিবারে ছয়জন সদস্য হলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজার ১ শত ৮০ জন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) শুভ দেবনাথ জানান, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন-গৃহহীন কয়েক কোটি পরিবারকে ঘর করে দিয়েছেন। তার এই উদ্যোগ দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।বিপুলসংখ্যক পরিবারকে জমিসহ ঘর প্রদান বিরল ঘটনা।
তজুমদ্দিন উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে ৬৫২ টি পরিবারকে ঘর প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।৩৭৮ টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে, এর মধ্যেই ১হাজার ৩০ টি পরিবার কে ঘর প্রদান করে তজুমদ্দিন উপজেলা কে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত