1. info@www.skytvnews24.com : Sky TV News 24 :
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন

তিন মাস বন্ধ ভোলার ৩৪.৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট, লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৪৫৮ বার পড়া হয়েছে
এইচ এম জাকিরঃ ভয়াবহ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘ তিন মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে ভোলার ৩৪.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট। যদিও জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখতে জেলার বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওজোপাডিকো আপ্রাণ চেষ্টা করে গেলেও চাহিদার তুলনায় কম সংখ্যক বিদ্যুৎ পাওয়ায় এলাকাভিত্তিক ঘনঘন লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন সংস্থাটি। এতে করে দীর্ঘ তিন মাস যাবত বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
খুরিয়ে খুরিয়ে চলা দ্বীপ জেলা ভোলার তৎকালীন ডিজেল চালিত ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্টের মাধ্যমে জেলার বিদ্যুতের চাহিদা কোনভাবেই মিটাতে পারেনি তৎকালীন পিডিবি। দিনের ১২ টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও এরপরও লোডশেডিং লেগেই থাকতো। অবশেষে এই সমস্যা থেকে উত্তরণে ২০০৬ সালের দিকে সিনহা গ্রুপ ভোলার খেয়াঘাট এলাকায় গ্যাসভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার সম্পূর্ণ রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টের কাজ শুরু করেন। ২০০৯ সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় এই বিদ্যুৎ প্লান্ট।
তবে পাওয়ার প্লান্টটি চালু হওয়ার পর থেকেই প্রায় সময়ই ছোটখাটো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এক দুই দিন বন্ধ থাকতো এ প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম। এছাড়াও বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দু-দুইবারই মাসব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে পুরা ভোলাবাসীকে থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন অন্ধকারে।
সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি বড় ধরনের মেকানিক্যাল ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায় এই প্ল্যান্টের কার্যক্রম। এরপর থেকেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে পুরো ভোলা জেলা। ২৪ ঘন্টা পর জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে সচল হয় ভোলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় উপজেলা ও এলাকাভিত্তিক ঘন ঘন লোডশেডিং এর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সক্রিয় রেখেছেন বিদ্যুৎ সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান  ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ফর ডিস্টিবিউশন (ওজোপাডিকো) কোম্পানি লিঃ। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৩৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্ট টানা ৩ মাস ধরে বিকল থাকায় বিদ্যুতের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ দিতে না পারায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।
একদিকে গরম অন্যদিকে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ তারা। দিনে ও রাতে বিদ্যুতের এমন অবস্থায় বিপর্যস্ত জনজীবন। তবে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার মালিকরা।
এদিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে ৩ মাস ধরে ৩৪.৫ মেগাওয়ার্ট ক্ষমতা সম্পন্ন রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট মেশিনটি বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ।
তবে রেন্টাল কর্তৃপক্ষ বলছেন বিষয়টি সমাধানের ব্যাপারে তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে কখনও ৩৮ ডিগ্রী কখনও বা ৩৭ ডিগ্রী তাপমাত্রা উঠা নামা করায় প্রচন্ড তাপদাহ বিরাজ করছে উপকূলীয় জেলায় ভোলায়। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। এরমধ্যে আবার বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে ভোগান্তির মাত্রা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিভিন্ন কলকারখানার মালিকরা।
শহরের কালীনাথ রায়ের বাজার এলকার ওয়ার্কশপ সালে আহামেদ মেকানিক আবু জাফর বলেন, আমাদের পুরো ব্যবসায়ই বিদ্যুতের উপর নির্ভর করছে। ঘনঘন লোডশেডিং এর কারণে কোন কাজেরই অগ্রগতি হচ্ছে না। এতে করে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে আমাদের ব্যবসায়ীদেরকে। একই কথা বলে ইলিশা বাস স্ট্যান্ড এলাকার ওয়ার্কশপের কর্ণদার জহির ও মিজান বলেন, আমাদের বব্যবসা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে অস্বাভাবিক লোডশেডিং। যারফলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দুস্কর হয়ে পড়েছে।
ক্যাবল অপারেটর কৃষ্ণ দাস বলেন, একদিকে গরম আর অন্যদিকে লোডশোডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ। বিদ্যুতের কারণে আমরা সঠিকভাবে সার্ভিস দিতে না পারায় মাস শেষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিল উঠাতেও আমাদেরকে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের চেয়েও বাসাবাড়িতে ছোট ছোট ছেলে সন্তান নিয়ে ঘরের গৃহিণীরা যেন রয়েছেন আরো বিপাকে। আকলিমা, সুলতানা, মোসাম্মদ শাহিনুর, তাসলিমা সহ একাধিক গৃহিনী বলেন, বিদ্যুৎ এতো বেশী লোডশেডিং হচ্ছে, তাতে করে ঠিকভাবে বাসার ফ্রিজ চালানো যাচ্ছে না। রাতে আরো বেশী গরম পরে তখন ভোগান্তির যেন শেষ নেই, ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খুবই কষ্ট হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য সরকারের প্রতি সকলে উদাত্ত আহ্বান জানান।
তবে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ না থাকায় বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানান ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইয়াসিন কাউসার। তিনি বলেন, ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় ৮০ হাজার গ্রাহকের চাহিদা ৩০ মেহাওয়ার্ট কিন্তু জাতীয় গ্রীড থেকে  আমরা  পাচ্ছি ২২ মেহাওয়ার্ট। যে কারনে লোডশেড করতে হচ্ছে বাধ্য হচ্ছি। এ জেলায় যদি গ্রীড সাবষ্টেশন করা যায় তাহলে এমন সমস্যা থাকবে না।
এ ব্যাপারে ৩৪.৫ মেগাওয়ার্ট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাযবস্থাপক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেশিন সমস্যা হয়েছে। আশা করি আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
তবে এ জেলায় জাতীয় গ্রিডের একটি সাব স্টেশন থাকলে এ অঞ্চলের মানুষকে এভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে থাকতে হতো না বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং
error: Content is protected !!