প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চার বছরের লড়াইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক নতুন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যা সম্ভবত ভালো কিছুর দিকেই এগোচ্ছে। যদিও নির্বাচনে জো বাইডেনের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ফলে সামগ্রিক দিক থেকে সম্পর্কের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
বাইডেনকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানানোর সময় চীনের সর্বোচ্চ নেতা শি জিনপিং বলেন, তিনি আশা করেন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলো পার্থক্য তৈরি করতে পারে এবং সংঘাতকে এড়িয়ে যেতে পারে। তবে হেসে-খেলে চারটি বছর কাটিয়ে দেয়া হয়তো সহজ কাজ হবে না। যেখানে চীনের বিপক্ষে শক্তি দেখানোর জন্য বাইডেন হয়তো নিজের দলের মধ্য থেকেই চাপের সম্মুখীন হতে পারেন।
কয়েক দশক ধরে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের পক্ষে থাকা বাইডেন নিজের নির্বাচনী গণসংযোগগুলোতে ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিকে ‘বেপরোয়া’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্ক দণ্ড তুলে নেয়া কিংবা চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে টেকনোলজিস ও জনপ্রিয় ভিডিও অ্যাপ টিকটকের নির্মাতা প্রতিষ্ঠাতা বাইটডান্স লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিতে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেননি বাইডেন।
বাইডেন যা ইঙ্গিত দিয়েছেন তা চীনকে মোকাবেলায় আরো বেশি বৈশ্বিক পদ্ধতি। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাণিজ্য, সাইবার অপরাধ, তথ্যের গোপনীয়তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে বৈশ্বিক নিয়ম বিকশিত করতে সহযোগী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর সঙ্গে কাজ করবেন। তবে এটা সত্যি, একই সময়ে তিনি নিজ দলের সদস্যদের কাছ থেকে চাপের মুখে পড়বেন বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করার জন্য।
এর আগে ২০১১ সালে বাইডেন ও শি জিনপিং দুজনই যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট তখন একে অপরের সঙ্গে অনেকবার বৈঠক করেছিলেন। দুটি দেশের ভালো সম্পর্কের জন্য কয়েক দশক ধরে বাইডেন কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু গত দশকে ওয়াশিংটন ডিসির অন্যান্য নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে তার অবস্থানও কঠোর হয়েছে।
এটা এখনো স্পষ্ট না যে ট্রাম্পের নীতিগুলোর কোনটি বাইডেন বদলে দিতে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বাইডেন এও জানেন যে যদি তিনি কোনোটি পরিবর্তন করেন, তবে তার বিরুদ্ধে চীন নিয়ে নমনীয় হওয়ার অভিযোগ আসতে পারে।
বাণিজ্য ছাড়াও বাইডেনকে অন্য যেসব সমস্যায় পড়তে হবে তাতে তাইওয়ান ইস্যুও রয়েছে। এর আগে তাইওয়ান বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করেছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং ৪০ বছরের মাঝে তাইপেতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে বাইডেন এখন নিজস্ব চীন নীতি পরিকল্পনা করা শুরু করেছেন। এখন তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি চীনকে মোকাবেলায় ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান ধরে রাখবেন কিনা। নাকি এমন কাঠামো তৈরি করবেন যেখানে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সহযোগিতামূলক মনোভাবও বজায় থাকবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত