এআর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশনঃ সামুদ্রিক জেলেদের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত বিশেষ ভিজিএফ’র চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নসহ একাধিক ইউনিয়নে জেলেদের চাল বিতরণে এ ধরনের অনিয়মের বিষয়গুলো প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটলেও এ নিয়ে একেবারেই নিশ্চুপ যেনো উপজেলা প্রশাসন।
দেখা গেছে, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী জেলে মাঝি মাল্লাদের নামে বরাদ্দকৃত বিশেষ ভিজিএফ এর চাল প্রকৃত জেলেদের অধিকাংশদেরকে না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ী এবং জেলে পেশায় নেই এমন ব্যক্তিদেরকে দেয়া হচ্ছে জেলেদের জন্য বরাদ্দিকৃত বিজিএফ এর চাল। এ নিয়ে প্রকৃত জেলেরা স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বার সহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেও এর কোন প্রতিকার না পাওয়াই চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত জেলেদের মাঝে।
তাছাড়া ত্রিশ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা থাকলেও যে সকল জেলেরা চাল পেয়েছেন তাদের চালের বস্তা মেপে দেখা গেছে ২৫ কেজি, কোনটাই আবার ২৬ থেকে ২৭ কেজিও রয়েছে। বস্তার গায়ে ৩০ কেজি লেখা থাকলেও প্রতিটি বস্তায় পরিমাণে ৪/৫ কেজি চাল কম রয়েছে।
চরমাদ্রাজ ইউনিয়ন পরিষদে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলেদের চাল নিতে আসছেন ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কামরুল ইসলাম। তিনি কেরামতগঞ্জ বাজারের একজন পুরাতন ব্যবসায়ী হয়ে জেলেদের চাল নেয়ার জন্য তিনিও লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। অবশেষে দেখা গেল তিনি জেলে না হয়েও ২৭কেজি চাল পেয়েছেন। একই অবস্থা দেখা গেছে ৩নং ওয়ার্ডের রফিক হাওলাদারের ছেলে মাইনুদ্দিনের ক্ষেত্রে। জেলের সন্তান না হয়েও তার বাবার পক্ষে এসে চাল নিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তার চালের বস্তা মেপে দেখা যায় ২৫ কেজি ৪শ গ্রাম।
এ ব্যাপারে মইনুদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার বাবা জেলে নয় ব্যবসা করেন। স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে তারা জেলেকাট পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
যদিও ইউনিয়ন পরিষদের পাশে হারুনের বাড়ি হওয়ায় তাই জেলে না হয়েও ৩১ কেজি চাল পেয়ে মনের আনন্দে বাড়িতে যাওয়ার সময় হারুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার চাচাতো ভাই ইউনিয়ন পরিষদে চাল পরিমাপকারী হওয়ায় তিনি জেলে না হয়েও চাল পেয়েছেন এমনকি পাপ্যর চেয়েও বেশি চাল পেয়েছেন।
এছাড়া চাল পাওয়া বহু জেলের চাল পরিমাপ করে দেখা গেছে, বস্তা প্রতি চার পাঁচ কেজি চাল কম আছে। ৩নং ওয়াডের চর নাজিম উদ্দিন গ্রামের প্রকৃত জেলে খলিল মাঝি চাল পেলেও ৩০ কেজির পরিবর্তে বস্তায় রয়েছে ২৭ কেজি। বেশ কয়েক জন জেলের চাল ওজন করে জানান, ২৫ থেকে ২৭কেজির উপরে কেউ চাল পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলে জানান, জেলেদের মাঝে এ চাল ফ্রি দেয়ার কথা থাকলেও প্রতি জনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। গত ট্রিপে ৩৫কেজি চাল দেয়া হলেও এবার চাল কম দেয়ায় তারা ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। জেলেরা জানান, এক হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে এই কথা জানতে পারলে তাকে আর চাল দেয়া হবে না এমন ভয়ে অনেকেই টাকা দিয়েও মুখ খুলছেনা।
জেলেদের বাহিরে ব্যবসায়ীরা কিভাবে চাল পায় এর জবাবে ইউপি সচিব মো. আলম বলেন, এদেশের তালিকাই এই ভাবে হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান মো.আব্দুল হাই বলেন, জেলেদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। প্রতিপক্ষরা এটা অপপ্রচার করছে। চাল কম দেয়ার বিষয়টির উত্তর এড়িয়ে যান চেয়ারম্যান।
চাল বিতরণ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত উপজেলা সমবায় অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, চাল বিতরণের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। কর্তৃপক্ষকে চাল ঠিক মতো দিতে বলি কিন্তু তারা না শুনলে কি করার আছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক বলেন, প্রকৃত জেলেরা যাতে সঠিক পরিমাণে চাল পায় সে বিষয়ে আমি সংশ্লিস্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে বলে দিব। কারো কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ প্রমানিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত