এইচ এম জাকিরঃ দীর্ঘ পাঁচ বছর পলাতক থেকে অবশেষে গ্রেফতার হলেন লালমোহনের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (হাই স্কুল) প্রভাবশালী শিক্ষক অর্থখেকো ভাস্কর চন্দ্র দাস।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে বরিশালের রুপাতলি বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তার বিরুদ্ধে ৮টি অর্থ আত্মসাৎ মামলা রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি মামলার সাজাপ্রাপ্ত ও পাঁচটি মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি তিনি।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত আসামি ভাস্কর চন্দ্র দাস লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (হাই স্কুল) শিক্ষকতার পাশাপাশি বাজারে জুয়েলারির ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে লাভের প্লোভন দেখিয়ে অগণিত মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। পাশাপাশি ব্যবসা ও নিজের চাকরি দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকেও নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা ঋণ। বছরের পর বছর ঋণ খেলাপি হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে ২০১৯ সালের ৯ই এপ্রিল লালমোহন থেকে গা-ঢাকা দেন ভাস্কর। এরপর থেকেই ব্যাংকের পাশাপাশি স্থানীয় ভুক্তভোগীরা তাকে না পেয়ে একে একে তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করেন লালমোহন থানায়। তবে পালিয়ে থাকায় দীর্ঘ পাঁচ বছরেও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
লালমোহন থানা সূত্রে জানা যায়, আসামি ভাস্করের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৮টি মামলার মধ্যে ৩টি মামলার সাজা ও পাঁচটি মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি তিনি।
এমতবস্থায় ভোলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহিদুজ্জামান বিপিএম এর নির্দেশনা পুলিশের সাইবার টিম বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস ব্যবহার ও মোবাইল ট্রাকিং এর মাধ্যমে বিভাগীয় শহর বরিশালে ভাস্করের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সক্ষম হন। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে বরিশালের রুপাতলী বাস স্ট্যান্ড এলাকায় আসামি ভাস্করের উপস্থিতি রয়েছে এমন এক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে ভাস্করকে সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর দুপুরের দিকে তাকে নিয়ে আসা হয় লালমোহন থানায়।
এদিকে জুয়েলারি ব্যবসার পাশাপাশি লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসলেও ভাস্কর অর্থ আত্মসাৎ মামলায় টানা পাঁচ বছর যাবত তার অস্তিত্ব লালমোহনে না থাকলেও স্কুলের হাজিরা খাতায় প্রায় অর্ধেক সময় ধরে তার উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। এমনকি বেতন উত্তোলনও ছিলো তার রীতিমতো। ভুয়া মেডিকেল প্রেসক্রিপশন দিয়ে দীর্ঘ সময়ে সে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও অদৃশ্যকারণে তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক সহ স্থানীয়দের মাঝেও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
যদিও বর্তমানে তার বেতন স্থগিত রয়েছে বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এদিকে আসামি ভাস্করের গ্রেপ্তারের খবরে এক এক করে লালমোহন থানায় ছুটে আসেন ভুক্তভোগীরা। তাদের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য এরই মধ্যে থানার অফিসার ইনচার্জের বরাবর পাঁচটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন তারা।
এ ব্যাপারে লালমোহন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মাহাবুব উল আলম জানান, আসামি ভাস্করের বিরুদ্ধে আটটি মামলার মধ্যে তিনটিতে সাজা ও পাঁচটি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। এমনকি তাকে গ্রেফতারের খবর শুনে এরই মধ্যে আমাদের হাতে আরো পাঁচটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা। আগামীকাল সকালে আসামি ভাস্করকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। এরপর বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমেই তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত