এইচ এম জাকিরঃ ষষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান ও ভোলা সদর এই তিন উপজেলায় আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। তাই শেষ মুহূর্তের জন্য প্রত্যেক প্রার্থী সভা সমাবেশ মিটিং মিছিল উঠান বৈঠক সহ করছেন বিভিন্নভাবে নির্বাচনী প্রচারণা। তারই সাথে আগামী ২১ তারিখে কার মুখে ফুটবে বিজয়ের হাসি তা দেখার অপেক্ষার পালা গুনছেন প্রার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটাররা।
এদিকে চলমান নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় অন্যান্য বারের তুলনায় এবার প্রার্থীদের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েকগুণ। তাই প্রচার প্রচারণার মধ্য দিয়ে ষড়গড়ম ভোটের মাঠ। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই স্পষ্ঠ হয়ে উঠছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়েও একটা বাড়তি চাপ রয়েছে প্রার্থীদের মাঝে। তবে এ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের স্বজন ও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ভোটের দিন নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অনেকটাই সঙ্কা প্রকাশ করছেন ভোটাররা।
সদর উপজেলাঃ- ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে ভোলা সদর উপজেলা। নির্বাচনে বিরোধী দলীয় প্রার্থী না থাকায় হাড্ডা হাড্ডি লড়াই চলছে আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী চেয়ারম্যান প্রার্থীর মাঝে। তাদের মধ্যে একজন দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোশারেফ হোসেন অপরজন তিনবারের নির্বাচিত ভাইস-চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ ইউনুছ। দলের মধ্যে উভয়েই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।
এবারের নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব তোফায়েল আহমেদ এর নিশ্চুপ ভূমিকা দলীয় নেতা কর্মীদেরকে কিছুটা হতাশ করলেও তার দুই ভাগ্নের দুই দিকের অবস্থান নিয়ে শুরু থেকেই নির্বাচনের অনেকটা উত্তাপ রয়েছে। ভাগ্নে পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান মনির রয়েছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব মোশারেফ হোসেনের পক্ষে। অপরদিকে আরেক ভাগ্নে জেলা আওয়ামীলীগের ত্রান ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রয়েছে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইউনুস এর পক্ষে। তাই যোগ্যতা আর কাজের মূল্যায়নের মাপকাঠিতে জেলা ও তৃনমূলের নেতা কর্মীরা বিভক্ত হয়ে অবস্থান নিয়েছেন দুই প্রার্থীর পক্ষে। যদিও তৃনমূলের সুবিধাবঞ্চিত অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই অবস্থান নিয়েছেন মোটরসাইকেল প্রার্থীর পক্ষে।
এ উপজেলার জনমত জরীপে মোটরসাইকেলের প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ ইউনুস এগিয়ে থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আনারস ও মোটরসাইকেল প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞ মহল। তবে কিছু কিছু কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠায় নির্বাচনের দিন সহিংস ঘটনার আশংকাও করছেন সাধারণ ভোটাররা।
এ উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ১১৪টি। মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার ৩ শ’ ৬৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৩ শ’ ৩৮ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮৩ হাজার ২৮ জন। হিজড়া ভোটার ৩ জন।
বোরহানউদ্দিন উপজেলাঃ- ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলা। এখানে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল এর ভগ্নিপতি আনারস প্রতীকের প্রার্থী মোঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আলহাজ্ব তোফায়েল আহমেদ এর ভায়রা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দুইবারের নির্বাচিত ভাইস-চেয়ারম্যান কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব রাসেল আহমেদ।
দলীয় নির্দশনাকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দলের মধ্যে আলোচনা সমালোচনায় পরেন ওই দুই নেতা। এ সব আলোচনার তোয়াক্কা না করে ভোট যুদ্ধে মাঠে নামেন তারা। পোস্টার লিফলেট, উঠান বৈঠক, জনসংযোগ ও সভা সমাবেশ করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নিজেদের পক্ষে জনমত গড়তে প্রচার প্রচারনায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছন তারা। এখানে বিএনপির সাবেক উপজেলা সভাপতি এড. মোস্তাফিজুর রহমান নির্বাচনে অংশ নিলেও তেমন সাড়া নেই ভোটারদের মাঝে।
মূলত আওয়ামী লীগের তিন প্রভাবশালী নেতার মধ্যেই চলছে ভোটের ত্রিমূখী লড়াই। তবে মাঠ পর্যায়ে আবুল কালাম আজাদ আলোচনায় থাকলেও প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে রয়েছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব রাসেল আহমেদ। জনমত জরিপে ভোটের মাঠে এ দুজনের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র।
এ উপজেলায় ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৮২ টি। এর মধ্যে ১০ টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা যায়। এখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ১২ হাজার ১শ’ ৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ১০ হাজার ৩২১ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ১হাজার ৮শ’ ৪১ জন।
দৌলতখান উপজেলাঃ- ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে দৌলতখান উপজেলা পরিষদ। এখানে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন প্রার্থী। এখানে সকল প্রার্থী আওয়ামী লীগ দলীয়। তারা হলেন, দৌলতখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনারস প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীর, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী মোঃ মঞ্জুরুল আলম, ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী মামুনুর রশিদ বাবুল চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মোঃ ইয়াছিন লিটন ও আওয়ামী লীগ সমর্থক দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী মোঃ বাবুল মাতাব্বর।
তাদের প্রচার প্রচারনায় সরগরম হয়ে উঠেছে দৌলতখান উপজেলা নির্বাচন। হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী মামুনুর রশিদ বাবুল চৌধুরী কে হাড়াতে মড়িয়া অপর ৪ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। কিন্তু ভোটের মাঠে তিনিই রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। তার এই শক্ত অবস্থানই প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, বাবুল চৌধূরীকে হাড়াতে অপর ৪ প্রার্থীকে একাট্টা হয়ে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে উপর মহলের। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে ভোটারদের মধ্যে।
তবে জনমত জরীপে ভোটের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী মামুনুর রশিদ বাবুল চৌধুরীর সাথে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীর এর মধ্যে এমনটাই জানান ভোটাররা।
এ পরিস্থিতিতে আগামী ২১ তারিখে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী জানান ভোটাররা। এই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৬ টি। এখানে উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১লাখ ৫৫ হাজার ৪শ’ ৫১জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৮১ হাজার ৬শ’ ১৯ জন। মহিলা ভোটার সংখ্যা ৭৩ হাজার ৮শ’ ৩২ জন।
তবে ৩টি উপজেলার সাধারণ ভোটাররা নিজের ভোট নিজে যাতে দিতে পারে সে জন্য অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোট দেখতে চায় তারা।
যদিও ২১ তারিখে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপহার দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছেন ভোলা জেলা প্রশাসন এমনটি দাবি করে ভোলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, অতীতের নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন কি হবে সম্পূর্ণ একটি ব্যতিক্রম নির্বাচন। যেখানে থাকবে না কোন হানাহারি মারামারি, এক কথায় বলতে গেলে এবারে নির্বাচনটি হবে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত